উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৭/০৯/২০২৪ ২:০৬ পিএম , আপডেট: ২৭/০৯/২০২৪ ৩:১৯ পিএম

আব্দুল কুদ্দুস রানা :: কক্সবাজার শহরের পশ্চিম পাশে বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাট ছিল এক সময়ের প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র। এই ঘাট দিয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত চলাচল করত জাহাজ ও যাত্রীবাহী লঞ্চ। এখন সবই স্মৃতি।

আড়াই বছর আগে নদীর ওপর প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫৯৫ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। তখন থেকে ভূমিদস্যুদের নজর পড়ে সেতুর দুপাশের প্যারাবনের দিকে।

এ পর্যন্ত অন্তত ৬০০ একরের বেশি প্যারাবন ধ্বংস করে তাতে নির্মিত হয়েছে চার শতাধিক পাকা-সেমিপাকা ঘরবাড়ি, দোকানপাটসহ নানা স্থাপনা।

উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ও ১ মার্চ যৌথ অভিযান চালিয়ে চার শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে জেলা প্রশাসন।

তখন দখলমুক্ত করা হয় বাঁকখালী নদীর ৩০০ একরের বেশি প্যারাবনের জমি।

গত মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, উচ্ছেদ করা প্যারাভূমিতে ফের নির্মিত হয়েছে চার শতাধিক ঘরবাড়ি, দোকানপাটসহ নানা স্থাপনা। অনেকে টিনের বেড়া দিয়ে শত শত একর জলাভূমি ঘিরে রেখেছেন।

স্থানীয় লোকজন ও পরিবেশকর্মীরা বলেন, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এরপর টানা ৪৫ দিনে প্যারাবনের উচ্ছেদ করা জায়গায় ফের ঘরবাড়ি নির্মাণের হিড়িক পড়েছে। এ পর্যন্ত কেউ বাধা দেয়নি।

নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে উৎপত্তি হয়ে ৩৪ কিলোমিটারের নদীটি রামু ও কক্সবাজার সদর হয়ে শহরের কস্তুরাঘাট-নুনিয়াছটা দিয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে।

নুনিয়াছাটা থেকে মাঝিরঘাট পর্যন্ত ছয় কিলোমিটারে সবচেয়ে বেশি দখলের ঘটনা ঘটেছে। গত ১০ থেকে ১২ বছরে এই ছয় কিলোমিটারে ১ হাজারের বেশি অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হয়।

কস্তুরাঘাট থেকে সেতুর দিকে যেতে সড়কের পূর্ব পাশে পাহাড়সমান বর্জ্যের স্তূপ চোখে পড়ে। শহরের ময়লা আবর্জনা ট্রাকে ভরে এখানে ফেলা হচ্ছে।

খননযন্ত্র দিয়ে সেই বর্জ্য নিচু জায়গায় ভরাট করা হচ্ছে। অথচ নদীতে বর্জ্য ফেলার ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে।

পরিবেশবাদী সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, কক্সবাজার পৌরসভা থেকে খুরুশকুলে যাতায়াতের জন্য নির্মিত সেতুর কারণেই ঐতিহ্যবাহী নদীর মরণদশা যাচ্ছে।

দেড় মাইল প্রস্থের নদীটি সংকুচিত হয়ে সেতুর গোড়ার অংশ এখন ২০০ ফুটের কাছাকাছি এসে ঠেকেছে। তাতে নৌচলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

গত কয়েক মাসে দুই লাখের বেশি কেওড়াগাছ নিধন করে ৬০০ একরের প্যারাবনে শত শত অবৈধ স্থাপনা নির্মিত হওয়ায় পাখির আবাসস্থল, মৎস্যসম্পদ-জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়েছে।

প্যারাবনের জলাভূমি ভুয়া কাগজে বেচাবিক্রি করে ৬০ থেকে ৭০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন শহরের বদরমোকাম, কস্তুরাঘাট, পেশকার পাড়াভিত্তিক পাঁচটি সিন্ডিকেটের শতাধিক ব্যক্তি।

গত ২৩ মে জেলা প্রশাসনের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত হয় জেলা নদী রক্ষা কমিটির সভা। সেখানে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান সারোয়ার মাহমুদ বিএস দাগ অনুসরণ করে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, সীমানা নির্ধারণ এবং দখলদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। গতকাল পর্যন্ত কিছুই হয়নি।

এ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( রাজস্ব) বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। এরপর নদীর সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে।

দেখা গেছে, নদীর ওপর নির্মিত স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) দৃষ্টিনন্দন সেতু দিয়ে ছোট যানবাহন চলাচল করছে। সেতুর পশ্চিম পাশে প্যারাবনের অন্তত ৩০০ একরের জলাভূমিতে নির্মিত হয়েছে দেড় শতাধিক পাকা-আধা পাকা ঘরবাড়ি। অনেকে বাড়ি তৈরির জন্য খণ্ড খণ্ড জলাভূমি টিনের ঘেরা দিয়ে ঘিরে রেখেছেন।

সেতুর পূর্ব পাশেও অন্তত ৩০০ একর জলাভূমিতে নির্মিত হয়েছে আরও শতাধিক পাকা-আধা পাকা ঘরবাড়ি। নদী থেকে ড্রেজার মেশিনে বালু উত্তোলন করে জলাভূমি ভরাটের দৃশ্যও চোখে পড়ে। ট্রলার মেরামতের ডকইয়ার্ড, মুরগির খামার, গাড়ির গ্যারেজ কোনোটি বাদ নেই।

নদীর বুকে নির্মিত ২৩টি ঘরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেশির ভাগ ঘরবাড়ির মালিক মহেশখালী, কুতুবদিয়া, টেকনাফ, রামু, চকরিয়ার বাসিন্দা। আছেন আইনজীবী, রাজনীতিক, ব্যবসায়ীও।

কেনার সময় তাঁদের বলা হয়েছিল, এসব ব্যক্তিমালিকানাধীন খতিয়ান জমি। কিন্তু গত বছর যৌথ বাহিনীর উচ্ছেদের পর অনেকে জানতে পারেন সবাই প্রতারণার শিকার হয়েছেন।

এলজিইডি কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন খান বলেন, যানবাহন চলাচলের জন্য সেতুটি কয়েক মাস আগে খুলে দেওয়া হয়। তবে সেতুতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়নি।

সেতুর আশপাশের জায়গা দখল হলেও তাঁদের অধিগ্রহণ করা জায়গা ঠিক আছে।

নদী জায়গা দখল করে ঘরবাড়ি নির্মাণের দায়ে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মারুফ আদনান, সাবেক সভাপতি ইশতিয়াক আহমদসহ ৩৬ প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে ২০২২ সালের ১৫ জুন মামলা করে পরিবেশ অধিদপ্তর। এর আগে অন্তত ৭০ দখলদারের বিরুদ্ধে আরও তিনটি মামলা করা হয়। মাত্র দুজন ছাড়া এ পর্যন্ত অন্য আসামিরা ধরা পড়েনি।

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের উপপরিচালক জমির উদ্দিন বলেন, নদীর ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত জায়গায় যেসব স্থাপনা নির্মাণ হয়েছে তার সবটুকু উচ্ছেদ করা হবে। তখন অন্যান্য দখলদারের বিরুদ্ধে আরও মামলা করা হবে।

পাঠকের মতামত

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ও চোরাচালান ঠেকাতে বিজিবির বুলেটপ্রুফ গাড়িতে টহল

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি পয়েন্টে মরিয়া হয়ে সক্রিয় থাকা রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে আর চোরাচালান বন্ধে ...

কানাডায় স্ত্রী ও সন্তানকে রেখেই প্রতারণার মাধ্যমে বিয়ের পিড়িতে চকরিয়া নুর!

কক্সবাজারের টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া পরবর্তীতে কানাডায় বসবাসরত নুর বেগম নামের এক মহিলাকে বিয়ের ...

সিইসির মা-বাবার সমস্ত সম্পদ দিয়ে কক্সবাজারে গড়ে তোলা হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

তোফায়েল আহমদ, কক্সবাজার:: কক্সবাজারের কুতুবদিয়া দ্বীপের গর্বিত সন্তান এ এম এম নাসির উদ্দীন ১৯৬৮ সালে ...